বাংলা খবর বিদ্যুৎ ও বিদেশি বিনিয়োগ। কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নিজস্ব মতামত।
বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আছে বিশ্বের সেরা সেরা কোম্পানি গুলিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার। কিন্তু আমরা পারছিনা।
ভিয়েতনাম কেন আমাদের থেকে এগিয়ে এটা নিয়ে পূর্বের লেখায় অনেক কিছুই বিস্তারিত আলোচনা করেছি। অধিকাংশ মেম্বার ভাল ভাবে নেননি।
ভিয়েতনাম তাদের দেশে ব্যাবসা করাকে সহজ করেছে। সেদেশ থেকে বিদেশি কোম্পানিকে টাকা অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ সহজ করেছে তেমনি অন্য দেশ থেকে তাদের দেশে টাকা আনার জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করেছে। আমাদের দেশে এরকম সুবিধা দিতে গেলে অনেক সমালোচনায় পড়তে হবে।
বাংলা খবর
আসলে আপনি যদি রক্ষণশীল হন তাহলে আশা করবেন না যে ভিয়েতনামের মত সফলতা পাবেন। আপনাকে ব্যাবসা বাণিজ্য উন্মুক্ত করতে হবে। আর এতে সমস্যায় পড়বে দেশীয় শিল্প। আবার লাভবানো হবে দেশীয় শিল্প।
কারন বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হলে দেশে যারা নিকৃষ্ট মানে পণ্য তৈরি করেন, পণ্যে ভ্যাজাল দেন, কাস্টমার সার্ভিসের ব্যাপারে উদাসিন তারা নিজেদের মান উন্নয়ন না করলে বন্ধ হয়ে যাবে। বাজারে সঠিক মানের পণ্য ছাড়া টেকা যাবেনা সেই বার্তা যাবে। এতে নিজে থেকে তারা তাদের পণ্যের মান বৃদ্ধি করবে। এক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারেও তাদের ব্রান্ডিং এর সুনাম প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে
বাংলা খবর
আবার বৈশ্বিক কোম্পানির উপস্থিতি থাকলে এদেশের কোম্পানি গুলি বিশ্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে ভাল ধারনা পাবে। নিজেদেরকে সেভাবে গড়ে তুলতে পারবে। হয়ে উঠতে পারে মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি।
আর এই দুই ক্ষেত্রের বাইরে দেশের প্রকৃত ব্যাবসায়ীকে সুরক্ষার ভেতর আনতে হবে। বিশেষ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
#বিদ্যুৎ_এবং_বিদেশি_বিনিয়োগ
গোল্ডফিস মেমরি না থাকলে নিশ্চিত ভাবেই আপনারা জানবেন যে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এখন অনেক উন্নত। এক যুগ আগে অনেক কোম্পানি এদেশে বিদ্যুৎ ব্যাবহারের নিশ্চয়তা না পেয়ে এদেশ ছেড়ে চলে গেছে। আমাদের কিছুই করার ছিলনা চেয়ে দেখা ছাড়া। মোমবাতি এবং হারিকেন এখন প্রায় বিলুপ্ত হলেও বিদ্যুৎ খাতের সমস্যার সমাধান হয়নি উলটা নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩৫০০ মেগাওয়াট আর চাহিদা ছিল ৫৫০০+ মেগাওয়াট। এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,০০০ মেগাওয়াট কিন্তু চাহিদা ১৪০০০ মেগাওয়াট।
বাংলা খবর
কিন্তু সমস্যা হল উৎপাদন ক্ষমতা এবং চাহিদার ভেতর অনেক বড় গ্যাপ রয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে এত বিদ্যুৎ কেন্দ্র করে লাভ কি? চাহিদা তো বাড়েনি?
উত্তর হল বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যত দ্রুত আমরা বৃদ্ধি করতে পেরেছি তত দ্রুত এর চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারিনি। সঞ্চালন লাইনের দুর্বলতার কারনে লোডশেডিং মুক্ত করতে পারিনি। যদি মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ এর লাইন থাকত তাহলে ঝড় বা জোরে বাতাস হলে অটো বিদ্যুৎ সার্কিট অফ করে রাখা লাগত না। সঞ্চালন লাইন বিচ্ছিন্ন হবার সমস্যা হত না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিতে পেরেছি আমরা কিন্তু এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য দিকে নজর দিতে পারিনি। ফলে অর্থের বড় রকমের অপচয় হচ্ছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলিকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া লাগছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এরুপ পরিস্থিতিতে অপ্রয়জনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ না করে সঞ্চালন লাইন উন্নতকরনে বিনিয়োগ জরুরি।
Bangla News
#তাহলে_আমাদের_উত্তোরনের_উপায়_কি?
আমার এ ব্যাপারে মতামত দিলে অনেকেই ভুল ভাবে নিতে পারেন। এজন্য আগেই বলছি যে এটা ব্যাক্তিগত মত। ভাল না লাগলে এড়িয়ে চলবেন।
ধরুন চীন থেকে ৩৪ টি কোম্পানি সরে গিয়ে অন্য দেশে কারখানা করতে চাচ্ছে। তাদের অপশনে আছে ভিয়েতনাম, বার্মা, ভারত, বাংলাদেশ। এখন এই দেশ গুলির ভেতর তারা কেন বাংলাদেশকে বেছে নিবে?
ভিয়েতনামে অবকাঠামো ভাল, ব্যাবসার ঝক্কি কম, ওখানে বিনিয়োগ করলে লাভ তুলে জাপানে সহজে পাঠানো যাবে। চাইলেন জাপান থেকে আবার নতুন বিনিয়োগ ওখানে আনা যাবে। ভাল বন্দর সুবিধা রয়েছে।
কিন্তু অসুবিধা হল দেশের জনগণ কম। তাই ভিয়েতনামের নিজ দেশের মধ্যে চাহিদা সীমিত। রপ্তানিই মূল লক্ষ হতে হবে। বিদ্যুৎ খরচ এবং শ্রমিক খরচ বেশি।
Bangla News
ভারতের ক্ষেত্রে কম মূল্যে জমি পাওয়া যাবে, ভারতের বিশাল জনসংখ্যার বিশাল বাজার রয়েছে। এখানে কারখানা করলে ভারতের বাজারেও প্রবেশ করা যাবে সেই সাথে রপ্তানির সুযোগ ও রয়েছে।
সমস্যা হল এখানে ব্যাবসার নীতি ভিয়েতনামের থেকে জটিল। টাকা চাইলেই এখান থেকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ খরচ বেশি।
বার্মার ক্ষেত্রে জমি নামমাত্র মূল্যে পাইলেও অবকাঠামো ঘাটতি রয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ এর পর্যাপ্ত সাপ্লাই নেই। তবে সব থেকে কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যাবে। চাইলে মুনাফা সহজে অন্য দেশে নেয়া যাবে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাবসার পরিবেশ বেশ জটিল, চাইলেই মুনাফা সহজে অন্য দেশে নেয়া যায়না, অবকাঠামো এখনো অতটা উন্নত নয়।
কিন্তু এখানে শ্রমিক সস্তা, যদি মিরসরাই তে বিনিয়োগ করে তবে অবকাঠামো এবং বন্দর সমস্যার সমাধান হবে।
কিন্তু এরপরো বাংলাদেশকে খুব বেশি আকর্ষনীয় করে তোলা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি?
আমার প্রস্তাব হল-
ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে অলস বসে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলিকে আমাদের ৯০০০ কোটি টাকা চার্জ দেয়া লাগছে। যদি এমন করি যে বিদেশি কোন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে
১. ৬০%- ৮০% বিদ্যুৎ খরচে সরকার ভর্তুকি দিবে প্রথম ৩-৫ বছর। (এতে যেই ক্যাপাসিটি চার্জ অলস বসে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলিকে দেয়া লাগত সেটা দিয়েই এই খরচ বহন করা লাগবে। অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিলে ইকনোমিতে পজিটিভ কোন প্রভাব পড়েনা। কিন্তু ওই চার্জ তাদের না দিয়ে এই সকল কোম্পানিকে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা লাগত তাদের, সেই সাথে বিদেশি এই কোম্পানির বিনিয়োগে দেশ লাভবান হত)
বাংলা খবর
২. এই ভর্তুকি ৮০% বা ক্ষেত্র বিশেষে ফ্রি করে দেয়া যাবে ঐসকল কোম্পানিকে যারা এমন সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে যেটাতে বাংলাদেশের দেশীয় কোন কোম্পানি নেই। এতে দেশীয় উৎপাদকদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার প্রশ্ন থাকবে না। দেশে সম্পূর্ন নতুন পণ্য উৎপাদন লিস্টে যুক্ত হল।
৩. এই কোম্পানি গুলিকে অন্যান্য সকল সুবিধা দিতে হবে যেগুলা ভিয়েতনাম, ভারত, বা অন্য দেশ অফার করে।
৪. যদি দেশীয় কোন কোম্পানি এই একি সেক্টরে বিনিয়োগ করতে চায় তবে তাদের সুবিধা বিদেশী বিনিয়োগ কারী কোম্পানির থেকে ২০% বেশি হবে।
এভাবে যদি আরো আধুনিক এবং সময়উপযোগী অফার আমরা দিতে পারি তাহলে এদেশে বিনিয়োগ টেনে আনা সম্ভব। এতে বিদ্যুৎ এর চাহিদা দ্রুর বাড়বে। দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
উপরে যে সকল সুবিধার কথা বলা হল এটা দিতে ৯০০০ কোটি টাকার অনেক কম হলেই সম্ভব। এই পরিমান অর্থ আমরা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে নষ্ট করতেছি। তাহলে কেন এই টাকার ভাল উপযোগিতা আমরা বের করতে পারিনা?
বাংলা খবর